অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান, দেশে ফিরলেন ‘বীর’ অভিনন্দন।


IIW :- দিনভোর দুদেশের সীমান্তে টানটান উত্তেজনা। পঞ্জাবে ওয়াঘা সীমান্তে জনজোয়ার। অপেক্ষা ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান-র দেশের মাটিতে ফিরে আসা। শুক্রবার রাত ৯টা ২০ মিনিট নাগাদ দেশের মাটিতে পা রাখলেন পাকিস্তান সেনার হাতে গ্রেফতার হওয়া অভিনন্দন বর্তমান। চরম উত্কণ্ঠার অপেক্ষার অবসান ঘটল দেশবাসীর। এদিন আটারি সীমান্তে পাকিস্তানি চিকিৎসকরা অভিনন্দন-র শারীরিক পরীক্ষা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বায়ুসেনার আধিকারিকরা। প্রসঙ্গত, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার অবন্তীপোরায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর কনভয়ে ফিদায়েঁ হামলা চালায় জইশ-ই-মহম্মদ (জেইএম) সন্ত্রাসবাদীরা। জইশ জঙ্গিদের ভয়াবহ হামলায় অকালেই প্রাণ হারিয়েছেন সিআরপিএফ-এর ৪৯ জওয়ান। পুলওয়ামা হামলার ১২ দিন পর গত মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তানের ঘরে ঢুকে জইশ জঙ্গিদের একাধিক ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ শিবির গুড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। পুলওয়ামা হামলা এবং ভারতের প্রত্যাঘাতের পর থেকেই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। এরপরই পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান ভারতের ভূখন্ডে ঢুকে পড়লে লঙ্ঘনকারী পাকিস্তানি যুদ্ধবিমানকে তাড়া করতে গিয়ে এখন পাকিস্তানে বন্দি হন ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। উইং কম্যান্ডারকে মুক্তির বিষয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনওরকম আপোসে যেতে রাজি না হয়ে আন্তর্জাতিকস্তরে চাপের মুখে পড়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অভিনন্দন বর্তমানকে ফেরতে পাঠাতে রাজি হয়। আগে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে সংঘাত বাড়ানোর অভিপ্রায় নেই তাঁদের। নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি রয়েছেন ইমরান খান। তবে, সূত্রের খবর, অভিনন্দকে ফেরাতে ইসলামাবাদের সঙ্গে কোনওরকম আপোসে যাবে না নয়াদিল্লি। অবশেষে নিঃশর্তে অভিনন্দনকে ফেরত পাঠানো কথা ঘোষণা করে ইমরান সরকার। এদিন ওয়াঘা-আটারি সীমান্তে ছেলেকে নিতে অমৃতসরে পৌঁছে গিয়েছেন তাঁর বাবা এয়ার মার্শাল এস বর্তমান ও মা শোভা বর্তমান। জাতীয় পতাকা, ফুল-মালা নিয়ে অভিনন্দনের অপেক্ষায় দেশবাসী। ইতিমধ্যেই ভারতের পথে রওনা দিয়েছেন অভিনন্দন। পাকিস্তানের ইসলামা বাদ থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হচ্ছে লাহৌরে। সড়কপথে নিয়ে আসা হচ্ছে তাঁকে। অমৃতসরের ডেপুটি কমিশনার শিবদুলার সিং ধিলোন জানিয়েছেন, ‘শুক্রবার ভারতে ফিরছেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। ঠিক কখন তিনি ভারতে ফিরবেন, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। দিল্লি থেকে ভারতীয় বায়ুসেনার উচ্চপদস্থরা এখানে রয়েছেন, তাঁরাই অভিনন্দনকে স্বাগত জানাবেন।’ এরমাঝে এদিন জম্মু ও কাশ্মীরের হান্দওয়ারায় এনকাউন্টার চলাকালীন শহিদ হলেন তিন জওয়ান। এদিন নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দফায় দফায় সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গোলাবর্ষণ করতে থাকে পাকিস্তান। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গোপন সূত্রে জঙ্গিদের উপস্থিতির খবর পেয়ে কুপওয়ারার খানান বাবাগুন্ড এলাকায় এবং কুপওয়ারার উত্তরে হান্দওয়ারায় কর্ডন এবং সার্চ অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। অভিযান চলাকালীন নিরাপত্তা বাহিনী বনাম জঙ্গিদের গুলির লড়াইয়ে এদিন হান্দওয়ারায় শহিদ হয়েছেন মোট পাঁচজন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন এক সিআরপিএফ অফিসার, এক সিআরপিএফ জওয়ান, দুই পুলিশের কনস্টেবল এবং এক সাধারণ নাগরিক, আহত আরও পাঁচ। এদিন জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দফায় দফায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে পাকিস্তান। সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে এদিন বিকেল ৪টে ১৫ মিনিটে রাজৌরির নওশেরা সেক্টরে মর্টার শেলিং এবং সন্ধে ৬টায় নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর মেন্ধার, বালাকোট এবং কৃষ্ণা ঘাটি সেক্টরে গোলাবর্ষণ করে পাকিস্তান। পাল্টা আক্রমণ চালায় ভারতীয় সেনা ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। অন্যদিকে, কুপওয়ারার উত্তরে হান্দওয়ারায় একটি বাড়িতে কয়েকজন জঙ্গির লুকিয়ে থাকার খবর পেয়ে অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। এরপরই জঙ্গিরা গুলি চালাতে থাকায় পাল্টা এনকাউন্টার করে সিআরপিএফ বাহিনীর জওয়ানরা। গুলির লড়াই চলাকালীন শহিদ হন এক সিআরপিএফ অফিসার, নিরাপত্তা বাহিনীর এক জওয়ান, দুই পুলিশের কনস্টেবল এবং এক সাধারণ নাগরিক। এখনও পর্যন্ত আরও পাঁচজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। এদিন সকালে অভিনন্দন পাক সেনার ঘেরাটোপে কড়া নিরাপত্তার মদ্য দিয়ে ইসলামাবাদ থেকে লাহোর হয়ে আটারি সীমান্তে আনা হয় তাঁকে। ইসলামাবাদ থেকে সড়ক পথে নিয়ে আসা হয় অভিনন্দনকে। কিন্তু ঘড়ির কাঁটায় রাত ৮টা পেরিয়ে গেলেও অভিনন্দন কিংবা ভারতীয় অফিসারদের কাউকেই দেখা যায়নি৷পরিস্থিতি থমথমে হয়ে ওঠে।লাহোর থেকে সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ ওয়াঘা সীমান্তে এলেও কিছু সরকারি কাজকর্মের কারণে হস্তান্তরে দেরি হয়। এদিন রাত ৯টা ২০ মিনিটে ভারতের মাটিতে পা রাখেন অভিনন্দন। এদিকে যত সময় যাচ্ছে তত উৎকণ্ঠা বাড়ছে সীমান্তের এপারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজনের মধ্যে। সকাল ৬টা থেকে কয়েক হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছেন আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে। কেউ নিয়ে এসেছেন ভারতের পতাকা কেউ আবার ঢাক-ঢোল নিয়ে অভিনন্দকে স্বাগত জানাতে তৈরি। নিরাপত্তার কারণে ইতিমধ্যে বিটিং দ্য রিট্রিট বাতিল করেছে বিএসএফ। এদিকে যত সময় যাচ্ছে তত উৎকণ্ঠা বাড়ছে সীমান্তের এপারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজনের মধ্যে। সকাল ৬টা থেকে কয়েক হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছেন আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে। কেউ নিয়ে এসেছেন ভারতের পতাকা কেউ আবার ঢাক-ঢোল নিয়ে অভিনন্দকে স্বাগত জানাতে তৈরি। নিরাপত্তার কারণে ইতিমধ্যে বিটিং দ্য রিট্রিট বাতিল করেছে বিএসএফ। কিন্তু শোনা যাচ্ছে পাকিস্তানের বিটিং দ্য রিট্রিটের জন্যই নাকি অভিনন্দনের দেশে ফেরা দেরি হচ্ছে৷ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একাংশ বলছে, পাকিস্তানের অফিসাররা ইচ্ছা করেই বিভিন্ন বিষয়ে অসুবিধা তৈরি করে অভিনন্দনের ভারতে আসা আটকে রেখেছে৷ পাকিস্তান দুপুরের মধ্যেই অভিনন্দনকে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ বিকেল ৪টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তাঁকে সীমান্তে আটকে রাখা হয়েছে৷ অভিনন্দনের ফেরা আমাদের কূটনৈতিক জয় বললেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ৷ অবশেষে মাতৃভূমিতে ফিরছেন ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। একইসঙ্গে পুলওয়ামা হামলার নিন্দা না করায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর নিন্দায় সরব হয়েছেন অমিত শাহ। বৃহস্পতিবারই পাক প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, \”শান্তির বার্তা\” স্বরূপ উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে শুক্রবার ভারতে ফেরানো হবে। শুক্রবার অমিত শাহ পাক প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, “পাকিস্তানে অবস্থিত জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে মোদী সরকার ইতিমধ্যেই সন্ত্রাসবাদী ও তাদের সমর্থনকারীদের মনে ”ভয়” ধরিয়ে দিয়েছেন। পাক প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল পুলওয়ামা হামলার নিন্দা করা। আমরা তাঁকে কিভাবে বিশ্বাস করব? বা তাঁর থেকে কিভাবে কোনও কিছু আশা করা যায়? হয়তো এই পরিস্থিতি তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে তবুও মুখের কথা অন্ততপক্ষে বলা উচিত ছিল তাঁর। অবশেষে দেশের মাটিতে পা রাখলেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। শুক্রবার দিনভর অপেক্ষার পর রাত ৯টার পর তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দিল পাকিস্তান। এর আগে পাক সেনা ক্যাম্পে তাঁর মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয়। অভিনন্দনকে তাঁর সার্ভিস রিভলবারও ফেরত দেওয়া হয়েছে। সীমান্তে সামরিক প্রটোকল শেষ করেই রাত ৯টা ২০ মিনিট নাগাদ ভারতের মাটিতে পা রাখলেন অভিনন্দন বর্তমান। তাঁকে স্বাগত জানাতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন বায়ু সেনার পদস্থ কর্তারা। তবে এর আগে শুক্রবার সকালেই ছড়িয়ে পড়েছিল খুশির খবর। জানা গিয়েছিল ইসলামাবাদ থেকে সড়কপথে লাহোরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। সঙ্গে রয়েছেন পাকিস্তানের ভারতীয় হাই কমিশনের অ্যাটাশে জে ডি কুরিয়েন। প্রাথমিক ভাবে শোনা গিয়েছিল, দুপুর দু’টো নাগাদ ওয়াঘা সীমান্তে এসে পৌঁছবেন তিনি। কিন্তু বেলা যত গড়াতে বোঝা যাচ্ছে অভিনন্দনের দেশে ফিরতে সন্ধে হয়ে যাবে। বেলা দু’টোর পর শোনা গিয়েছিল বিকেল ৪টে নাগাদ ওয়াঘা সীমান্তে আসবেন পাইলট। এরপর পাওয়া খবর অনুযায়ী উইং কম্যান্ডারের দেশে ফিরতে রাত ৮টাও হতে পারে। তবে পেড়িয়ে যায় সেই সময়সীমাও। আজ রাত প্রায় সোয়ানটা নাগাদ পাক সীমান্তে তাঁকে প্রথম দেখা যায় সেনার ঘেরা তোপে। এরপর আরও ১০ মিনিট পর তাঁকে তুলে দেওয়া হয় ভারতের হাতে। এদিকে আজ একঝলক তাঁকে দেখার অপেক্ষায় ওয়াঘা সীমান্তে উপস্থিত ছিলেন বহু উত্সুক মানুষ। আজ বহু প্রতিক্ষার পর দেশের মাটিতে পা দিলেও এখনই বাড়ি ফিরতে পারবেন না উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হবে সেনা হাসপাতালে। সেখানে তাঁর চিকিত্সা করা হবে। পাকিস্তানে ৩ দিন ছিলেন অভিনন্দন। সেখানে অভিনন্দনকে নির্যাতন করা হতে পারে। তাঁর পায়ে গুলি লেগেছে বলে খবর। এরইসঙ্গে অভিনন্দনের শরীরে গোপন যন্ত্রাংশ প্রবেশ করিয়ে দিতে পারে শত্রু দেশ। সে কারণে মানসিক ও শারীরিকভাবে অভিনন্দনকে সবল করে তোলা হবে।

Post a Comment

0 Comments