আবারো প্রকাশ্যে এলো কৈলাসহরের ডলুগাঁও দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের পাকা বাড়ি নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ।



IIW: দেবাশীষ দত্ত, নিজস্ব প্রতিনিধি, কৈলাসহর :- কৈলাসহরের ডলুগাঁও দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় এর পাকা বাড়ি অনেক পুরনো হয়ে যাওয়ায় স্কুল কমিটির পক্ষ থেকে এবং এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বারবার দাবী করার পর তৎকালীন রাজ্য সরকার প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দ করেন নতুন স্কুল বিল্ডিং নির্মাণের জন্য। এই কাজের সেংশন হয়েছিল ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর। স্কুল বিল্ডিং ভেঙে নতুন বিল্ডিং এর কাজ শুরু হবে বলে স্কুল বন্ধ রাখতে হবে এই কারণে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করতে পারবে না এ কথা ভেবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অধীর চন্দ্র দাস দপ্তরকে লিখিতভাবে জানান যে, স্কুলের পুরনো বিল্ডিং ভাঙ্গার পূর্বে স্কুল কমপ্লেক্সে অস্থায়ীভাবে চৌদ্দটি রুম করার জন্য। দপ্তর অস্থায়ীভাবে চৌদ্দটি রুম করার জন্য ৫০ লক্ষ টাকা সেংশন করে ২০১৮ সালের ২৮ মে। দপ্তর সম্পূর্ণ কাজটি করার দায়িত্ব দেয় পিডব্লিউডি কে। সেইমোতাবেক মে মাস থেকে ১৪ টি অস্থায়ী রুমের কাজ শুরু হয়েছিল। অক্টোবর মাসের কাজ শেষ হবার কথা ছিল। কিন্তু আজ অব্দি অর্ধেক কাজও হয়নি। প্রধান শিক্ষক অধীর বাবু বলেন, কাজের শুরু থেকেই কেলেঙ্কারি শুরু হয়ে যায়। অধীর বাবু কাজে নিম্নমানের হওয়ার দরুন বারবার আপত্তিও করেছিলেন কিন্তু উনার কথাতে ঠিকাদার পাত্তাই দেয়নি। অধীর বাবু কয়েকবার দপ্তরকে জানানোর পর দপ্তর অধীর বাবু কে বলেছিল কাজ বন্ধ করে দেবার জন্য। অধীর বাবু ঠিকাদারের নিকট কয়েকবার কাজের এস্টিমেট চেয়েছিলেন। অনেকবার বলার পর ঠিকাদার সাহেব এস্টিমেট এর প্রথম পৃষ্ঠা অধীর বাবু কে দিয়েছিলেন, পুরোটা দেন নি। তারপর অধীর বাবু স্কুল কমিটিকে নিয়ে নিম্নমানের কাজের জন্য আজ অব্দি চারবার মিটিং করেন। ২০১৮ সালের ২২ শে জুন প্রথম মিটিং হয়, ৭ জুলাই হয় দ্বিতীয় মিটিং, ১৩ আগস্ট হয় তৃতীয় মিটিং এবং ২৮ আগস্ট চতুর্থ মিটিং করা হয়। এতকিছু করার পর প্রভাবশালী ঠিকাদার নিজের মর্জি মত নিম্নমানের কাজ করে চলেছেন। চৌদ্দটি রুমের মধ্যে মাত্র সাতটি রুমের কাজ শুরু হয়েছিল কিন্তু তাও আজ পর্যন্ত শেষ হয়নি। রুমের কাজ শেষ হওয়ার আগেই রুমের বেড়া ও কাঠে পচন ধরে যায়। ঘরের ভিম লোহার পাইপ দিয়ে করার কথা থাকলেও বাজে বাঁশ দিয়ে করা হয়েছে। শুধু তাই নয় ঘরের উপরের টিনও নিম্নমানের। কোথাও টাটার কয়েকটি টিন লাগানো আছে বাকি সব জায়গায় জিন্দালের টিন লাগানো হয়েছে। যার ফলে ঘরের উপরে টিন ভালোভাবে সেট করা যাচ্ছেনা। সম্পূর্ণ কাজ শহরের সুভাষ দাস  ঠিকাদারের নামে বরাদ্দ হলেও সুভাষ দাস স্থানীয় চার যুবকের কাছে কাজটি বিক্রি করে দেন। স্থানীয় এই চার যুবক এতই প্রভাবশালী যে, প্রধান শিক্ষককে প্রায় সময়ই বলতো আপনি কাজ নিয়ে বেশি কথা বলবেন না বললে আপনাকে বদলি করে দেব। তা না হলে চূড়ান্ত খারাপ কিছু হবে, এসব বলে বরাবরই হুমকি দিত। এই চার যুবকের মধ্যে কিশোর মজুমদার নামে এক যুবক রয়েছে সে কৈলাসহর বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিসে সরকারি কর্মচারী হয়েও এই কাজের সাথে যুক্ত। সম্প্রতি এই জেলার বন্যার সময় কিশোর মজুমদার রিলিফ ক্যাম্পের সরকারি চাল চুরি করতে গিয়ে জনতার হাতে পাকড়া হয়েছিল। পুলিশকে জানানোর পর আজ অব্দি পুলিশ সেই প্রভাবশালী কিশোরকে গ্রেফতার করতে সাহস দেখায়নি। ডলুগাঁও দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের অস্থায়ী রুম তৈরি করতে এত সব কেলেঙ্কারি হচ্ছে প্রধান শিক্ষক অধীর চন্দ্র দাস তা নিজের মুখেই মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেন। প্রধান শিক্ষক অধীর বাবু এও বলেন যে কাজ সম্পূর্ণ না করে বিগত ১৫ দিন ধরে কাজ বন্ধ হয়ে আছে, তাই তিনি আগামী ১৭ ডিসেম্বর পুনরায় মিটিং ডেকেছেন স্কুল কমিটি এবং ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের নিয়ে। সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ও আমন্ত্রণ করেছেন।

Post a Comment

0 Comments