মৃত ব্যক্তি জীবিত হলেন, জীবিত হয়ে উনার নিজের নামের ভূমি বিক্রি করলেন।


IIW: বিকাশ ভট্টাচার্য, নিজস্ব প্রতিনিধি,ধর্মনগর :- মৃত ব্যক্তি জীবিত হলেন কিভাবে ? ০৯-০৬-১৯৮৭ তে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি ২০১৭ সালে জীবিত হয়ে উনার নিজের নামের ১৬ শতক ভূমি বিক্রি করলেন। তাও দলিলে মৃত ব্যক্তির টিপসই রয়েছে। তহশীলদার সন্তোষ চাকমা বলছেন এই ব্যক্তি তহশীল এ এসে উনার সামনে স্বাক্ষর করেছেন। আসল রহস্যটা কি তার সত্যতা উন্মোচনে আমাদের এই বিশেষ প্রতিবেদন। মৃত ব্যক্তিকে জীবিত বানিয়ে ভূয়ো স্বাক্ষর দিয়ে দলিল বানিয়ে ভূমি দখল করার অভিযোগ উঠল চারজনের বিরুদ্ধে। ঘটনা, চুড়াইবাড়ি তহশীল মৌজার প্রেমতলা এলাকার। এই তহশীল মৌজার ৯৩০ নং খতিয়ানের ১৩৬ নং দাগের ১০৭ শতক ভূমির মালিক হচ্ছেন সিদ্দেক আলী-পিতা আরজান আলী। যার মৃত্যু ০৯ /৹৬/ ৮৭ তারিখে হয়েছিল। এবং ডেড সার্টিফিকেট ও রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই সিদ্দেক আলী এত বছর পর আবার কিভাবে জীবিত হলেন ? অনেকেই তাজ্জব হতে পারেন যে মৃত ব্যক্তি কিভাবে জীবিত হয়। কিন্তু সাব রেজিস্ট্রার এর দলিল, নামজারীর রিপোর্ট ও  নামজারির নোটিশে দেখা যাচ্ছে মৃত সিদ্দেক আলী চার ব্যক্তির কাছে উনার ১৬ শতক ভুমি বিক্রি করেছেন এবং দলিলে উনার টিপসই রয়েছে। শরিফ উদ্দিনের কাছে ১৮/০৪/২০১৭ তারিখে জায়গা বিক্রি করেছেন সিদ্দেক আলী। একি সঙ্গে ১৭-০১-১৮ তারিখে রফিক উদ্দিন এর কাছে। ১২-০৪-১৮ তারিখে আবু বক্কর এর কাছে, এবং ১১/৮/১৭ তারিখে আবুল হোসেন নামের অপর এক ব্যক্তির কাছে। জায়গা বিক্রি করেন মৃত সিদ্দেক আলী। কিন্তু সিদ্দেক আলীর নাতি লাল মিয়ার অভিযোগ এই চার ব্যক্তি তাদের সাথে প্রতারণা করে সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়ো দলিল বানিয়ে ভূমি দখল করেছেন। তিনি বিষয়টি তদন্তের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছে নথিপত্রসহ অভিযোগ নামা পাঠিয়েছেন। সিদ্দেক আলীর ছেলে ও নাতির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে দলিল ও কাগজপত্র গুলি সম্পূর্ণ ভুয়ো। তবে মৃত ব্যক্তি কিভাবে জীবিত হয় তা নিয়ে রহস্যের দানা বেঁধেছে। তাছাড়া নামজারির  নোটিশ, নামজারীর রিপোর্ট ,জায়গার দলিল সহ অন্যান্য কাগজপত্রে তহশিলদার, সাব রেজিস্ট্রার, ডিড রাইটার, রেভিনিউ ইন্সপেক্টরের স্বাক্ষর রয়েছে এটা কিভাবে হলো ? রাজস্ব দপ্তর এর এই আধিকারিকদের কি কোনো গাফিলতি রয়েছে ? না মোটা লেনদেনের মাধ্যমে সম্পুর্ন  জালিয়াতি করে জায়গার দলিল বানানো হয়েছে তার তদন্ত প্রয়োজন। বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমের গোচরে আসতেই সংবাদকর্মীরা চুরাইবাড়ি তহশীল মৌজার তহসিলদারের কাছে গেলে তহশীলদার সন্তোষ চাকমা জানান ছিদ্দেক আলী উনার কাছে এসেছেন এবং টিপসই দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো মৃত ব্যক্তি কিভাবে জীবিত হলো। তা নিয়ে আমতা আমতা করে উত্তর দিলেন সন্তোষ চাকমা। ভুয়ো দলিল করার অভিযোগে যে সমস্ত সরকারি অফিসারদের নাম উঠে আসছে তারা হলেন বাবুল মালাকার তৎকালীন রেভিনিউ ইন্সপেক্টর। যার বিরুদ্ধে আরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ডিড রাইটার অবন্তী শব্দ কর, তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রার ও তহশিলদার সন্তোষ চাকমার। এত বড় গাফিলতি হলো কিভাবে। নিশ্চয়ই কোনো না কোনোভাবে তাদের মেনেজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তবে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ। এ বিষয়ে বর্তমান রেভিনিউ ইন্সপেক্টর আব্দুল জলিল এর কাছে সাংবাদিকরা গেলে এবং নথিপত্র গুলি দেখানোর পর রেভিনিউ ইন্সপেক্টর আব্দুল জলিলের ও মনে হয়েছে কোথাও না কোথাও গাফিলতি হয়েছে। এ ঘটনায় সবচেয়ে বড় বিষয়টি হল দলিল কিভাবে হয়েছে ? সত্যি কারের যদি দলিল হয়ে থাকে তাহলে মৃত আব্দুল জলিল কে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আসতে হবে। এবং ক্যামেরায ছবি উঠতে হবে তাহলে প্রশ্ন মৃত ব্যক্তি কিভাবে  সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে আসবে ? বিষয়টি জানার জন্য সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা মহকুমা শাসক সুব্রত কুমার দাসের কাছে গেলে এসডিএম সুব্রত দাস নথিপত্র গুলি দেখে সাথে সাথেই তদন্তের নির্দেশ দেন। দলিল ও অন্যান্য কাগজপত্র গুলি দেখে মহকুমা শাসকের চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার উপক্রম। তিনি সংবাদ কর্মীদের বলেন আপনারা বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য ধন্যবাদ আমি এবার তদন্ত শুরু করে দিচ্ছি। মহকুমাশাসক সুব্রত দাস জানান কিছুদিনের মধ্যেই তদন্তের রিপোর্ট বেরিয়ে আসবে নিশ্চয়ই কোন না কোন জায়গায় ভুল হয়েছে কারা জড়িত তা তদন্তে বেরিয়ে আসব। মহকুমা শাসকের কথামত যদি তদন্ত হয় তাহলে এই ঘটনায় আরো বড় বড় রাঘব বোয়ালদের নাম উঠে আসতে পারে। বাম আমলে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দালাল চক্র ঘুঘুর বাসা বেঁধেছিল। সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন নথিপত্র বের করা হতো এমন কি জায়গার দলিল বের করা হতো তাতে জড়িত থাকতেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা ও। অভিযোগ তাদের প্রচ্ছন্ন মদতে এই জালিয়াতিমূলক কাজগুলি হয়ে যেত। এরা মৃতকে জীবিত আর জীবিত কে মৃত বানাতে পুরো ওস্তাদের বাপ ।এখন দেখবার বিষয় তদন্তের পর কারা কারা জালিয়াতির জালে ফাসেন।

Post a Comment

0 Comments