বিষের সাম্রাজ্যে খোয়াই, আইনের ফাঁকে বাড়ছে নেশার রমরমা, কাঠগড়ায় প্রশাসনের সদিচ্ছা।

IIW : বিষের সাম্রাজ্যে খোয়াই, আইনের ফাঁকে বাড়ছে নেশার রমরমা, কাঠগড়ায় প্রশাসনের সদিচ্ছা।

ত্রিপুরা পুলিশের প্রেস বিজ্ঞপ্তি খুললেই চোখে পড়ে সাফল্যের খতিয়ান—কিন্তু আজ অবধি কোটি কোটি টাকার নেশা সামগ্রী পুলিশের হাতে লাগলেও গোটা ত্রিপুরা রাজ্যে এমন কোন নজির নেই যেখানে নেশা কারবারের  মুল চাই বা মুল পান্ডা একজনও গারদের ভেতরে রয়েছে! সিকি-আদুলি কিছু নেশা কারবারী জনতার দ্বারা বা পুলিশের জালে পড়লেও তা হয় ক্ষণিকের। 
যদি বিষয়টি খোয়াইয়ের ক্ষেত্রে হয়, তবে চিত্রটা একই। দেখা যায়, খোয়াই থানাধীন ঘোষপাড়া থেকে লালছড়া, অফিস টিলা থেকে সুভাষ পার্ক, সর্বত্র চলছে নেশা বিরোধী অভিযান। উদ্ধার হচ্ছে বিদেশি মদ, বাজেয়াপ্ত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার ব্রাউন সুগার, গাঁজা আর ইয়াবা ট্যাবলেট। খবরের কাগজে ছাপা হচ্ছে ধৃতদের ছবি, বাড়ছে পুলিশের খাতায় সাফল্যের পরিসংখ্যান। কিন্তু এই পরিসংখ্যানের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক অন্য, করুণ সত্য। লুকিয়ে আছে এক মায়ের চোখের জল, এক বাবার ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন আর নেশার ঘোরে ডুবে থাকা কোনো যুবকের শূন্য চাহনি। খোয়াইয়ের প্রতিটি সফল অভিযানের পরেও শহরের অন্ধকার গলিগুলোতে কান পাতলেই শোনা যায় এক চাপা আর্তনাদ। এই আর্তনাদ সেই সব পরিবারের, যাদের ঘরের ছেলে বা মেয়েটি আজ নেশার অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে।
আইনের এক অদ্ভুত ফাঁক যেন এই নেশা-সাম্রাজ্যের রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইন অনুযায়ী, নির্দিষ্ট পরিমাণের (সাড়ে পাঁচ গ্রাম) কম ড্রাগস সহ ধরা পড়লে জামিন পাওয়া সহজ। আর এই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে মূল কারবারিরা। তারা জানে, পুলিশ ছোটখাটো ডিলারদের ধরলেও, আইনের এই দুর্বলতার কারণে তারা দ্রুত ছাড়া পেয়ে যাবে। তাই মুল কারবারীরা ডিলারদের হাতে অল্প পরিমাণে নেশার সামগ্রী তুলে দেয়। ফলে, পুলিশি অভিযানে চুনোপুঁটিরা ধরা পড়লেও, রাঘববোয়ালরা থেকে যায় পর্দার আড়ালে, সম্পূর্ণ সুরক্ষিত।

জনসাধারণের অভিযোগ, এই চক্রের কথা পুলিশ জানে না, এমনটা নয়। খোয়াইয়ের অলিগলিতে কান পাতলেই শোনা যায় মূল পাণ্ডাদের নাম, তাদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার গল্প। তবে কেন তারা আজও অধরা? পুলিশের এই তথাকথিত সাফল্য কি তবে নিছকই 'আই-ওয়াশ'? কোন অদৃশ্য হাতের ইশারায় এই মাফিয়ারা বুক ফুলিয়ে তাদের বিষের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে? এই প্রশ্নগুলোই আজ খোয়াইয়ের বাতাসকে ভারী করে তুলেছে।

প্রতিটি সফল অভিযানের পর আমরা যখন হাততালি দিই, তখন হয়তো ভুলে যাই—এই নেশার ছোবল ধর্ম, বর্ণ, রাজনীতি বা আর্থিক অবস্থা দেখে না। আজ যা অন্যের ঘরের কান্না, কাল তা আমার বা আপনার ঘরের হাহাকারে পরিণত হতে পারে। যে তরুণ হয়তো রাজ্যের ভবিষ্যৎ গড়তে পারত, সে আজ এক অন্ধকার কুঠুরিতে নিজের ভবিষ্যৎকে পুড়িয়ে ছাই করছে।

পরিসংখ্যান দিয়ে হয়তো সাময়িক আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়, কিন্তু তাতে সমাজের ক্ষত সারে না। খোয়াইকে বাঁচাতে হলে, আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে, শুধুমাত্র ছোটখাটো ডিলারদের ধরে বাহবা কুড়ালে চলবে না। প্রয়োজন সদিচ্ছার, প্রয়োজন এই বিষবৃক্ষের শিকড় উপড়ে ফেলার। নতুবা এই সবুজ উপত্যকা একদিন কান্না আর দীর্ঘশ্বাসে ঢেকে যাবে, যার দায় এড়ানোর সুযোগ হয়তো আর থাকবে না। তবুও খোয়াইবাসীর শেষ আশার আলো বর্তমান খোয়াই জেলা পুলিশ সুপার এবং খোয়াই থানার ওসি সাহেবের দিকে।

Post a Comment

0 Comments