IIW : নিজস্ব প্রতিনিধি, দেবাশীষ দত্ত, কৈলাসহর :- কৈলাসহরের এক বেসরকারি নার্সিংহোমে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় অনেক রহস্যের গন্ধ বের হচ্ছে। অর্থাৎ নার্সিংহোমের গাফিলতি প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায় শিশু মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ যে কোন দিন যে কোন মুহূর্তে নার্সিং হোমের মালিক এবং সংশ্লিষ্ট স্টাফকে গ্রেফতার করতে পারে। উত্তর ত্রিপুরার জেলা সদরের বাসিন্দা অনুপম ধর এবং উনার স্ত্রী মৌসুমী পাল। অনুপমের বাড়ি ধর্মনগর আই এস বি টির সামনে অবস্থিত। স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হলে গত ছয় মাস ধরে নিয়মিত ভাবে প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডক্টর শর্মিষ্ঠা দাশ কে দেখাতেন। মৌসুমীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়াতে ডঃ শর্মিষ্ঠার কথা অনুযায়ী কৈলাসহরের এক বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়। পরের দিন অর্থাৎ আঠারো মে সকালে মৌসুমী এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। ঐদিন দুপুরে পুত্র সন্তানের অবস্থা খুবই খারাপ বলে পরিবারকে জানান নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মৌসুমীর পরিবারের সদস্যরা। মৌসুমির জ্যা, আইনজীবী দেবশ্রী ভট্টাচার্য বলেন জন্মের পর পরিবারের কাউকে পুত্র সন্তানকে দেখানো হয়নি, এমনকি ওজন উচ্চতা ইত্যাদি সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। নার্সিংহোমে ভর্তির পর থেকে নার্সিং হোমের স্টাফরা এবং মালিক কর্তৃপক্ষ মৌসুমীর পরিবারের মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করে আসছিলেন। এদিকে বিকালে হঠাৎ করে বলা হয় শিশুর অবস্থা খুবই খারাপ শিশুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আগরতলা নিয়ে যেতে হবে। নার্সিংহোমের এরকম ব্যবহারে দেবশ্রী ভট্টাচার্য প্রাথমিকভাবে কৈলাসহর থানায় আঠারো মে সন্ধ্যায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে শিশুটিকে আগরতলার টিএমসি তে নিয়ে যেতে রওনা দেন। আগরতলা যাবার পথেই শিশুটি মারা যায়। তারপরও টিএমসি তে যাবার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা দেন। দেবশ্রী দেবীর আরও গুরুতর অভিযোগ হল, আগরতলা যাওয়ার পথে শিশুটির অক্সিজেনের পাইপ নাক থেকে খুলে গেলে গাড়িতে থাকা নার্সিংহোমের নার্সরা অক্সিজেনের পাইপটি পর্যন্ত লাগাতে পারেনি। শুধু তাই নয়, টিএমসি তে যাবার পর শিশুকে মৃত ঘোষণা দেবার সাথে সাথেই নার্সিংহোমের নার্সরা গা ঢাকা দেয় অর্থাৎ টিএমসি থেকে পালিয়ে যায়। ঘটনার কয়েক দিন পর দেবশ্রী ভট্টাচার্য পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়ে নতুন ভাবে আবার অভিযোগ জমা দেন ২২মে সন্ধ্যার পর কৈলাসহর থানায় এসে, এবং মামলার খোঁজখবর নেন পুলিশের কাছ থেকে। এবার সরাসরি নার্সিংহোমের স্টাফ এবং মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন দেবশ্রী। সঙ্গে এসে ছিলেন উনার স্বামী এবং দেবর। দেবশ্রী দেবী বলেন আমাদের পরিবারের যা ক্ষতি হবার তা তো হয়ে গেছে আর যেন কোন পরিবারের এমন ক্ষতি না হয়। তিনি আরো বলেন যে, এই ঘটনায় নার্সিংহোমের স্টাফ সহ মালিকের যেন ফাঁসি/কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়। ঘটনা সম্পর্কে কৈলাসহর থানার ওসি দেবাশীষ সাহাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, দেবশ্রী দেবীর প্রথম অভিযোগে গত বাইশ মে থেকে পুলিশ মামলা গ্রহণ করে ১৫৭সি.আর.পি.সি মোতাবেক তদন্ত শুরু করেছে এবং আদালতের অনুমতির জন্য পাঠানো হয়েছে। নার্সিংহোমে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। দেবাশীষ সাহা নিজেই জানিয়েছেন যে, শ্রীদেবী দ্বিতীয় অভিযোগপত্রে মালিক এবং স্টাফের বিরুদ্ধে নালিশ করেছেন। তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশ মালিক এবং তাদের স্টাফদের গ্রেপ্তার করতে পারে। নার্সিংহোমে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের তদন্তের দিকে সমাজের সব অংশের মানুষ তাকিয়ে রয়েছেন।
0 Comments